মাশরুম এর উপকারিতা
মাশরুম সম্পর্কে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে মাশরুম হলো বিষাক্ত ব্যাঙের ছাতা। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্যে আমার প্রিয় পাঠকদের জন্য সেই বদ্ধমূল ধারণায় কুঠারাঘাত করে শুরুতেই বিনীতভাবে জানাচ্ছি যে মাশরুম এর উপকারিতা এটি হলো একধরনের সুস্বাদু অত্যধিক পুষ্টিকর, প্রচণ্ড রকমের ঔষধি গুণসম্পন্ন সম্পূর্ণ হালাল সবজি। এটার বাইরে মাশরুম নিয়ে আপাতত আপনার আর সামান্যতম নেতিবাচক কিছু ভাবার দরকার নেই।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথার সাজি আমার এই বইয়ের বিভিন্ন পরতে পরতে পাবেন। আপনাদের সদয় জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি যে এ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতাধীন যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের দায়িত্বে থাকাকালীন খুলনা বিভাগের ১০টি জেলাতে সর্বপ্রথম মাশরুম চাষের গোড়াপত্তন হয়েছিল আমার হাতেই।
আমার সবচেয়ে বড়ো সফলতা হলো, আমি উদ্বুদ্ধ মাগুরার একজন বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন যুবক বাবুল আখতারকে মাশরুম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম, যে কি না আজ শত কোটিরও বেশি টাকার মালিক; সেই আশাব্যঞ্জক কাহিনিও আপনাদেরকে শোনাব।
মাশরুমের সাথে জড়িত থাকাকালীন ২০০৮ সালে চীনের মাশরুমসমৃদ্ধ ফুজিয়ান প্রদেশের ফুজিয়ান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট ইউনিভার্সিটিতে অবস্থিত মাশরুম ইন্সটিটিউটে দুই মাসব্যাপী মাশরুম চাষ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করারও সুযোগ পেয়েছিলাম যেখানে পৃথিবীর ৩৩টি দেশের ৫৭ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছিলেন।
সেই থেকে মাশরুম আমার শরীরের শিরা উপশিরায় প্রতিটি রোমকূপে গভীর মমতায় জড়িয়ে আছে। অতঃপর চাকুরিসূত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন অনুবিভাগে কাজ করলেও মাশরুমের সাথে এখনো রয়েছে আমার নাড়ির টান এবং নিবিড় মেলবন্ধন।
সবে জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব শেষ করে অবসরোত্তর ছুটিতে রয়েছি। এমন অবসর সময়ে কৃষি বিষয়ক বই প্রকাশনার শীর্ষে অবস্থানকারী “প্রাপ্ত প্রকাশন"র স্বতাধিকারী স্নেহভাজন আমিনুর রহমান এর অনুরোধে আমার হৃদয়তন্ত্রীতে মাশরুমের আরেকটি অনুরণনের সৃষ্টি হলো।
তাই মাশরুমের এ টু জেড তথ্যমালা সংবলিত মাশরুম বিষয়ক অধিক পুষ্টি ও ঔষধি গুণসম্পন্ন সবজি মাশরুমের পূর্ণাঙ্গ গাইড” শিরোনামের একটা পূর্ণাঙ্গ বই লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র। আশা করি মাশরুম ভোক্তা, মাশরুমের সাধারণ চাষি, মাশরুমের বাণিজ্যিক চাষিসহ মাশরুমের সাথে জড়িত শিক্ষক গবেষক সবার
ওয়েস্টার মাশরুম এর উপকারিতা
বিষাক্ত মাশরুম এর বৈজ্ঞানিক নাম
অতএব, এই পুস্তক সংকলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যাঁরা আমাকে সহায়তা করেছেন, উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়েছেন, তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ ও অনিঃশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বইটি সম্পর্কে আপনাদের কোনো পরামর্শ বা মতামত থাকলে পরবর্তী সংস্করণে সেটা সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন করতে চেষ্টা করব।
মাশরুম এমন একটা সবজি যা আপনি অল্প খরচে স্বল্প সময়ে অনায়াসে চাষ করে খেতে পারবেন। এর জন্যে কোনো জায়গা জমির প্রয়োজন নেই; আপনার বাসযোগ্য ঘরের ছোট্ট কোণে যেখানে একটু আলো বাতাস চলাচল করে সেখানে খুব সহজে চাষ করে আপনার প্রতিদিনের পারিবারিক পুষ্টিকর সবজি চাহিদার সবটা মেটাতে পারবেন। সেটা না করতে চাইলে বিশ্বস্ত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে শুকনা বা গুঁড়া মাশরুম কিনে এনেও খেতে পারেন।
আর যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে বাড়তি আয় করতে চান তবে সেটাও করতে পারবেন প্রাথমিকভাবে খুব কম অর্থ বিনিয়োগ করে। তবে বাজার থেকে বা অন্য কোনো মাশরুম চাষির থেকে মাশরুম কিনে খাবারের আগে সেটার গুণগত মান সম্পর্কে জেনে নিন।
একইভাবে শুকনা মাশরুম বা গুঁড়া মাশরুমের নামে কেউ যেন আপনাকে কোনো ভেজাল বা বিষাক্ত মাশরুম সরবরাহ না করতে পারে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখবেন। এই বই আপনাকে বিষাক্ত মাশরুম চিনতেও বিশেষভাবে সহায়তা করবে।
গোটা দেশবাসীর জন্যে আরও একটা আশাপ্রদ খবর হলো মাশরুম চাষের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ সহ পুষ্টিহীনতা নিরসনের জন্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় একটা বড়ো ধরনের প্রকল্প প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সহসাই দেশবাসী সেটার সুফল পাবেন বলে আমি ভীষণভাবে আশাবাদী।
পরিশেষে একটা কথাই জোর দিয়ে বলব- আপনাদের মন থেকে মাশরুম যে ব্যাঙের ছাতা এমন ভ্রান্ত ধারণা ঝেড়ে ফেলে দিয়ে পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে মাশরুম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনি মাশরুম চাষ করতে চাইলে বা কিনে খেতে চাইলে হাত বাড়ালেই এটার একটা যোগসূত্র পেয়ে যাবেন।
Last, but not least সবাইকে বলব যদি সুস্থ সবল দেহ চান নিয়মিত মাশরুম খান"।
Banglastatusথেকে সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News)ফিডটি।