মাশরুম এর ঔষধি গুনাগুন

 

গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধি গুণাগুণ কবে কোন দেশে ঠিক কখন মাশরুম নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে, সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও যতটা জানা যায় তাতে মাশরুমের সাথে চীনের সম্পৃক্ততার ইতিহাস ২০০০ বছরের বেশি সময়ের আগের। কিন্তু অপর এক তথ্যানুসারে মাশরুম নিয়ে প্রথম গবেষণা আমেরিকাতে শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। 

২০০৩-০৪ সালে আমেরিকার মাশরুম কাউন্সিল থেকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয় যে, মাশরুমে আছে ক্যালসিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, জিংক, সিলেনিয়াম, ফোলেট, নিয়াসিন, রিবোফ্লাবিন, থিয়ামিন, ভিটামিন-এ, বি-৬, বি-১২, সি, ই, শর্করা এবং আমিষ। 

আমেরিকান গবেষক বলেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি যেসব খাদ্যে অতিরিক্ত ক্যালরি, ক্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত যেমন মাংস দিয়ে তৈরি করা হ্যামবার্গার, পিৎজা, শিক কাবাব, বটি কাবাব ইত্যাদি খাবার দৈনিক একবার করে একটানা একবছর খেয়ে থাকেন তাহলে তিনি অনেক ধরনের ক্রনিক রোগে আক্রান্ত হবেন। 

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত, “State of Mushroom completed Research on Nutrition and medicinal value by Bart Minor, President, Mushroom Council, 1150- Dublin Blvd, Suit 200, Dublin, CA 94568, USA”

 শীর্ষক গবেষণার ফলাফল দেখে মাশরুম কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মি. বার্ট মাইনর তাঁর লেখা এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, "মাশরুম কাউন্সিল সমগ্র পৃথিবীব্যাপী যারা মাশরুম সম্বন্ধে গবেষণা করেছেন তাদেরকে এই মর্মে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা যেন তাঁদের মধ্যে মাশরুম বিষয়ক কোনো নেতিবাচক উক্তি বা বিভেন থাকলে সেটা শুধরে নেন এবং গবেষকদের মধ্যে কোনো মতভেদ থাকলে তিনি সেটা নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা করার ওপরে গুরুত্বারোপ করেন।

মাশরুমের ইতিহাস এবং পুষ্টিগুণ অনেক পুরানো হলেও হালে এটাকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, আগে কখনো সেটা করা হয়নি। মাশরুম নিয়ে দেশ বিদেশের বিস্তর গবেষণা এখন জানান দিচ্ছে যে, সুস্বাস্থ্য, রোগপ্রতিরোধ ও রোগ নিরাময়ে এটি একটি বড়ো ধরনের মহৌষধ।

 ২০০৪ সালে আমেরিকাতে মাশরুমের ওপরে এক জরিপ চালানো হয়। সেই জরিপ থেকে যারা নিয়মিত মাশরুম খান তাদের কাছে তারা কেমন আছেন জানতে চাওয়া হলে তাদের সবারই মন্তব্য ছিল খুবই ইতিবাচক।

বিভিন্ন সভ্যতায় মাশরুমের খাবার ও ঔষধে ব্যবহারের কথা উল্লেখ থাকলেও চীন, কোরিয়া, জাপান মাশরুমের ভেষজগুণ আবিষ্কারের ওপরে বেশি বেশি গবেষণা করেছে। চীনা একটা প্রবাদ আছে, "খাদ্য ও ঔষধ এই দুটি জিনিসের একটা


সাধারণ উৎস রয়েছে; আর এই চীনা প্রবাদের সত্যতার স্বপক্ষে সবচেয়ে ভা উপকরণ হলো মাশরুম। ১৯৯৯ সালের জনৈক চীনা গবেষক Gunde Cinerman বলেন, মাশরুম একটা হেলথ্ টনিক যা চা, স্যুপ, স্বাস্থ্যকর খাবার ও হারবাং মেডিসিনের অন্যতম উৎস হতে পারে। ১৯৯৫ সালে আরেকজন চানা গবেষক ি (Rai) মাশরুমকে Ultimate Health Food বা সর্বশেষ স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

১৯৮৯ সালে ইয়াং ও জং (Yang & Jong) নামের দুজন গবেষক দেশের ঐতিহ্যে । ১০৭ ধরনের ভেষজ মাশরুম, বা হারবাল ঔষধের তালিকা তৈরি করেছেন। বিগত ৪ বছর চীনা স্বাস্থ্যকর্মীরা মাশরুম থেকে নানান রকমের ট্যাবলেট, ক্যাপস এবং নির্যাস তৈরি করেছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই হলো ঋষি মাশরুম থেকে।

তবে মাশরুম হিসেবে চীনারা তাদের গবেষণার বেশিরভাগই সীমাবদ্ধ রেখেছেন গ্যানোডার্মা বা ঋষি মাশরুমের মধ্যে। চীনের ব্যাপক গবেষণার এক তথ্য থেকে জানা যায়, গ্যানোডার্মা বা ঋষি মাশরুম অনেক রোগ নিরাময়ে কাজ করে। 

পরে তাদের এই গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়ে। চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র গ্যানোডার্মা বা ঋষি মাশরুম গবেষণায় একটা অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করে, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে গবেষণা কে করেন। মাশরুম বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনিত হন যে, মাশরুমের মধ্যে পলিস্যাকারাইড এবং টাইটারপিনয়েড আছে, যা মানুষকে আরোগ্য করার প্রধান উপাদান। 

এটা রোগপ্রতিরোধে হৃত্যন্ত্র ও স্নায়ুতন্ত্রে বেশ ভালোমতো কাজ করে। রোগপ্রতিরোধেও এটি ভালো কাজ করে। গ্যানোডার্মা বা ঋষি মাশরুমের টাইটারপিনয়েড হৃত্যন্ত্রের রক্তসঞ্চালনকে স্বাভাবিক রেখে শরীরকে সুস্থ রাখে। 

গ্যানোডার্মার নির্যাস ইঁদুরের শরীরে ইনজেকশন করার ফলে দেখা গিয়েছে এটি ইঁদুরের রক্তসঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। গ্যানোডার্মা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমের ওপরে কাজ করে অনেক রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। ইঁদুরের ক্যানসার প্রতিরোধের গবেষণায় এটা খুব ভালো কাজ করেছে।

 মাশরুমের মধ্যে পলিস্যাকারাইড এবং টাইটারপিনয়েড আছে যেটা দেহের সচল কোষকে আরও সচল রাখে এবং দুর্বল কোষকে ধ্বংস করে; আর এভাবেই মাশরুম ক্যানসার কোষ নির্মূল করে। 

ক্যানসার চিকিৎসায় আধুনিক রেডিওথেরাপি খারাপ কোষকে ধ্বংস করতে গিয়ে অনেক ভালো কোষ কলাকে মেরে ফেলে। সেক্ষেত্রে গ্যানোডার্মার নির্যাস অনেক ভালো কাজ করে থাকে। শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে এটার জুড়ি নেই। 

সবচেয়ে বড়ো কথা গ্যানোডার্মা কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই অনেক রোগ নিরাময়ে কাজ করে থাকে।

অধিকন্তু, গ্যানোডার্মা ছাড়াও অন্যান্য মাশরুম নিয়ে উন্নত বিশ্বের ব্যাপক গবেষণায় এ ব্যাপারে অনেক ভালো ফলাফল পাওয়া গিয়েছে। বাংলাদেশে মাশরুম নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে মৌলিক কিছু গবেষণা হলেও এটা নিয়ে ব্যাপক কোনো গবেষণা হয়নি। 

একটা সময় ঢাকাস্থ বারডেম হাসপাতালের কতিপয় চিকিৎসক ডায়াবেটিস রোগীদের ওপরে ওয়েস্টার মাশরুম নিয়ে গবেষণা করে বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছিলেন। তবে দেশ বিদেশের বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে মাশরুমের পুষ্টি ও ঔষধিগুণ সম্পর্কে আমরা কিছু চমকপ্রদ তথ্য জেনে নিতে পারি।


মাশরুমের পুষ্টিগুণ:

বেঁচে থাকাসহ জীবনধারণের জন্যে আমরা যা কিছু খেয়ে থাকি সেটাই হলো খাবার বা খাদ্য। খাদ্য খেয়ে শুধু আমাদের উদরপূর্তি করলেই হবে না। খাদ্যের মধ্যে যদি পুষ্টি উপাদান না থাকে তাহলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে যাবে এবং একটা সময় আমরা অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ব; এটাই স্বাভাবিক।

 সুতরাং আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল এবং নীরোগ রাখতে হলে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ যেসব খাবারের মধ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান যথাযথ পরিমাণে আছে তাকেই সুষম খাবার বলে।

আমরা জানি সুষম খাদ্যের ০৬টি উপাদান, এগুলো হলো:

(১) শর্করা বা শ্বেতসার (Carbohydrate)

(২) আমিষ (Protei

(৩) স্নেহ বা তেল জাতীয় খাবার (Fat)

(৪) খনিজ লবণ (Minerals)

(৫) খাদ্যপ্রাণ (Vitamins) ও

(৬) পানি (Water)।

সুষম খবারের এই ছয়টি উপাদানের আলাদা আলাদা কার্যকারিতা রয়েছে। যেমন: শর্করা ঃ শরীরে তাপ বা শক্তি সরবরাহ করে ।

আমিষ : দেহের গঠন, বৃদ্ধি সাধন ও দেহের ক্ষয়পূরণ করে।

স্নেহ বা চর্বি দেহের শক্তি সরবরাহ করে, ত্বককে মসৃণ রাখে এবং খাদ্যপ্রাণকে যথাযথভাবে কাজে লাগায়।

আরো পড়ুন=  মাশরুম এর উপকারিতা

খনিজ লবণ

 মানব শরীরের ৬.১ ভাগ খনিজ লবণ দ্বারা গঠিত। এসবের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম (হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে), লৌহ (রক্তের অন্যতম উপাদান), আয়োডিন (শিশুর মেধা বৃদ্ধি করে এবং গলগণ্ড রোগ থেকে রক্ষা করে), ফসফরাস (ক্যালসিয়ামের সাথে মিশে দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে), সালফার (অ্যানজাইমের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং আমিষের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ।


করে), তামা (বকের উপাদান তৈরি করে), জিংক (শর্করা জাতীয় খাবারের বিপাকে সাহায্য করে), সোডিয়াম শরীরের জলীয় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে) ও পটাশিয়াম (চর্বিহীন মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করে) ইত্যাদি। খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন : দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও রোগপ্রতিরোধক হিসাবে কাজ
করে।


চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন: ভিটামিন এ, ডি ও কে এদের অভাবে রাতকানা রোগহয় ও হাড় বেঁকে যায়। ভিটামিন-ই রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে।


পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন: ভিটামিন-বি এর অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়, হজম শ ও স্মরণশক্তি কমে যায় ও কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। ভিটামিন-বি ১২ এর অভাবে চর্মরোগ, মুখে ও জিহবায় ঘা হয়। পানি : শরীরের বিপাকক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় তাই পানির অপর নাম জীবন।

সুষম পুষ্টি হিসেবে মাশরুমের গুণাগুণ

 আমরা এতক্ষণ জানলাম যে, শুধু উদরপূর্তির জন্যে আমাদের খাবার খেলেই চলবে না। আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল এবং নীরোগ রাখতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। আর খাবার যদি সুষম হয় তাহলে সে খাবারে অত্যাবশ্যকীয় ০৬টি উপাদানের সবকিছুই যথাযথ পরিমাণে বিদ্যমান থাকতে হবে।

তাই সুষম পুষ্টি হিসেবে মাশরুম এমন একটা খাবার যার মধ্যে সুষম খাবারের অত্যাবশ্যকীয় ০৬টি উপাদানই কমবেশি বিদ্যমান রয়েছে। আমরা মাশরুমের গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখেছি মাশরুমের মধ্যে পুষ্টি ও ঔষধিগুণের অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। 

একটা সময় দেশে বিদেশে এটা ছিল বিলাসবহুল জীবনের অধিকারী মানুষের জন্যে অভিজাত খাবার। এখনো চাইনিজ বা তারকা সংবলিত হোটেল রেস্তোরায় গেলে অনেক টাকার বিনিময়ে মাশরুম দিয়ে তৈরি স্যুপ বা অন্যান্য খাবার গ্রহণ করতে হয়।

আমিষ বা প্রোটিন হিসেবে মাশরুম

 মাশরুমের আমিষ হলো অত্যন্ত উন্নত, পূর্ণাঙ্গ এবং স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী। একটা সম্পূর্ণ আমিষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানবদেহের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি। 

মাশরুমে এই অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। অন্যান্য প্রাণিজ আমিষ যেমন মাছ, মাংস ও ডিমের আমিষ উন্নত হলেও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বি থাকার কারণে সেটা।

 শরীরে কোলেস্টরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে; যার ফলে মেদ ভুড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃৎরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু মাশরুমের আমিষে সেই সমস্যা । নেই। তাছাড়া মাশরুমের আমিষে ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতির সাথে

কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান লোভাস্টাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরে কোলেস্টেরল জমার ভয় থাকে না। এসব নানাবিধ কারণে মাশরুমের আমিষ সর্বোৎকৃষ্ট এবং নির্দোষ 

অসম্পৃক্ত চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে মাশরুম

মাশরুমে অসম্পৃক্ত চর্বি বা ফ্যাট থাকায় শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া মাশরুমে স্ফিঙ্গলিপিড ও আরগেস্টেরল থাকায় এটার মানকে আরও উন্নত করেছে। স্কিঙ্গলিপিড হাড়ের মজ্জা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্যে বেশ কাজ করে থাকে। 

অধিকন্তু মাশরুমে আরগেস্টেরল থাকার কারণে ভিটামিন-ডি সংশ্লেষণে কাজ করে; যা হাড় ও দাঁত তৈরি এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়ায়। এছাড়া মাশরুমের ফ্যাটে ৭০-৮০% লিনোলিক অ্যাসিড থাকায় শরীরকে সুস্থ রাখতে ভালো কাজ করে।

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হিসেবে মাশরুম

আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আমরা সবচেয়ে বেশি শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকি। এই শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যদি আমাদের দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে পুরোপুরি খরচ করতে না পারি তাহলে এটা আমাদের শরীরে চর্বি আকারে জমা হয়ে নানান ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে।

 মাশরুমে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম এবং তা পানিতে দ্রবণীয়। ফলে মাশরুমের শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্যে ক্ষতিকর নয় বরং অনেক বেশি উপকারী। 

এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোজেন, বেটা-ডি-গ্লুক্যান, ল্যাম্পল, লোভাস্টাটিন, ইরিটাডেনিন, এডিনোসিন, ইলুডিন প্রভৃতির ফলে দেহের জটিল রোগ নিরাময়ে এটা কাজ করে। 

এছাড়া মাশরুম অ্যাসিডিক সুগার ও অ্যাসিডিক পলিস্যাকারাইড বিশেষভাবে H51 সরবরাহ করে। মাশরুমে আঁশের পরিমাণও বেশি; জাতভেদে ১০-২৮% পর্যন্ত আঁশ পাওয়া যায়। এসব আঁশের মধ্যে রয়েছে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন । 

এসব আঁশ শরীরে হজম হয় না বিধায় এগুলো শরীরে শক্তি জোগানের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখে না। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে ইনসুলিন সমতা আনয়নে কাজ করে। সেইসাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণেও সহায়তা করে থাকে।

ভিটামিন ও মিনারেল হিসেবে মাশরুম:

ভিটামিন ও মিনারেল দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। প্রতিদিন শরীরের চাহিদানুসারে ভিটামিন ও মিনারেলের সরবরাহ না থাকলে শরীরে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে নানান রোগ তৈরি করতে পারে। ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হিসেবে মাশরুম বেশ ভাল কাজ করে। 

শুকনা মাশরুমে গড়পড়তা অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস এলিমেন্টসহ ৫৭-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান। মিনারেল হিসেবে। 

করে), তামা (রক্তের উপাদান তৈরি করে), জিংক (শর্করা জাতীয় খাবারের বিপাকে সাহায্য করে), সোডিয়াম (শরীরের জলীয় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে) ও পটশিয়ান (চর্বিহীন মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করে) ইত্যাদি । খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন ও দেহের বৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ ও রোগপ্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।


চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন: ভিটামিন এ, ডি ও কে ঃ এদের অভাবে রাতকানা রোগ হয় ও হাড় বেঁকে যায়। ভিটামিন-ই রক্তজমাট বাঁধতে সাহায্য করে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন: ভিটামিন-বি এর অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়, হজম শক্তি ও স্মরণশক্তি কমে যায় ও কোষ্টকাঠিন্য দেখা দেয়। ভিটামিন-বি ১২ এর অভাবে

চর্মরোগ, মুখে ও জিহবায় ঘা হয়। পানি ঃ শরীরের বিপাকক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয় তাই পানির অপর নাম জীবন।

সুষম পুষ্টি হিসেবে মাশরুমের গুণাগুণ

আমরা এতক্ষণ জানলাম যে, শুধু উদরপূর্তির জন্যে আমাদের খাবার খেলেই চলবে না। আমাদের শরীরকে সুস্থ সবল এবং নীরোগ রাখতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। আর খাবার যদি সুষম হয় তাহলে সে খাবারে অত্যাবশ্যকীয় ০৬টি উপাদানের সবকিছুই যথাযথ পরিমাণে বিদ্যমান থাকতে হবে।

 তাই সুষম পুষ্টি হিসেবে মাশরুম এমন একটা খাবার যার মধ্যে সুষম খাবারের অত্যাবশ্যকীয় ০৬টি উপাদানই কমবেশি বিদ্যমান রয়েছে। আমরা মাশরুমেল গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখেছি মাশরুমের মধ্যে পুষ্টি ও ঔষধিগুণের অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। 

একটা সময় দেশে বিদেশে এটা ছিল বিলাসবহুল জীবনের অধিকারী মানুষের জন্যে অভিজাত খাবার। এখনো চাইনিজ বা তারকা সংবলিত হোটেল। রেস্তোরায় গেলে অনেক টাকার বিনিময়ে মাশরুম দিয়ে তৈরি স্যুপ বা অন্যান্য খাবার গ্রহণ করতে হয়c

আমিষ বা প্রোটিন হিসেবে মাশরুম

মাশরুমের আমিষ হলো অত্যন্ত উন্নত, পূর্ণাঙ্গ এবং স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী। একটা সম্পূর্ণ আমিষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো মানবদেহের জন্যে অত্যাবশ্যকীয় ১টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি। মাশরুমে এই অত্যাবশ্যকীয় ১টি অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতি পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। 

অন্যান্য প্রাণিজ আমিষ যেমন মাছ, মাংস ও ডিমের আমিষ উন্নত হলেও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত চর্বি থাকার কারণে সেটা শরীরে কোলেস্টরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে যার ফলে মেদ ভুড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু মাশরুমের আমিষে সেই সমস্যা নেই। তাছাড়া মাশরুমের আমিষে ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের উপস্থিতির সাথে।

কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান লোভাস্টাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরে কোলেস্টেরল জমার ভয় থাকে না। এসব নানাবিধ কারণে মাশরুমের আমিষ সর্বোৎকৃষ্ট এবং নির্দোষ।

অসম্পৃক্ত চর্বি বা ফ্যাট হিসেবে মাশরুম

মাশরুমে অসম্পৃক্ত চর্বি বা ফ্যাট থাকায় শরীরের জন্যে অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া মাশরুমে স্ফিঙ্গলিপিড ও আরগেস্টেরল থাকায় এটার মানকে আরও উন্নত করেছে। ফিঙ্গলিপিড হাড়ের মজ্জা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্যে বেশ কাজ করে থাকে।

 অধিকন্তু মাশরুমে আরগেস্টেরল থাকার কারণে ভিটামিন-ডি সংশ্লেষণে কাজ করে; যা হাড় ও দাঁত তৈরি এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়ায়। এছাড়া মাশরুমের ফ্যাটে ৭০-৮০% লিনোলিক অ্যাসিড থাকায় শরীরকে সুস্থ রাখতে ভালো কাজ করে।


শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট হিসেবে মাশরুম: আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় আমরা সবচেয়ে বেশি শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ করে থাকি। এই শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট যদি আমাদের দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে পুরোপুরি খরচ করতে না পারি তাহলে এটা আমাদের শরীরে চর্বি আকারে জমা হয়ে নানান ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে। 

মাশরুমে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম এবং তা পানিতে দ্রবণীয়। ফলে মাশরুমের শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট শরীরের জন্যে ক্ষতিকর নয় বরং অনেক বেশি উপকারী।

 এছাড়া এর মধ্যে রয়েছে গ্লাইকোজেন, বেটা-ডি-গ্লুক্যান, ল্যাম্পল, লোভাস্টাটিন, ইরিটাডেনিন, এডিনোসিন, ইলুডিন প্রভৃতির ফলে দেহের জটিল রোগ নিরাময়ে এটা কাজ করে। 

এছাড়া মাশরুম অ্যাসিডিক সুগার ও অ্যাসিডিক পলিস্যাকারাইড বিশেষভাবে H51 সরবরাহ করে। মাশরুমে আঁশের পরিমাণও বেশি; জাতভেদে ১০-২৮% পর্যন্ত আঁশ পাওয়া যায়। এসব আঁশের মধ্যে রয়েছে সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন। 

এসব আঁশ শরীরে হজম হয় না বিধায় এগুলো শরীরে শক্তি জোগানের ব্যাপারে কোন ভূমিকা রাখে না। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে ইনসুলিন সমতা আনয়নে কাজ করে। সেইসাথে কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণেও সহায়তা করে থাকে।

ভিটামিন ও মিনারেল হিসেবে মাশরুম

ভিটামিন ও মিনারেল দেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে। প্রতিদিন শরীরের চাহিদানুসারে ভিটামিন ও মিনারেলের সরবরাহ না থাকলে শরীরে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে নানান রোগ তৈরি করতে পারে। 

ভিটামিন ও মিনারেলের উৎস হিসেবে মাশরুম বেশ ভাল কাজ করে। শুকনা মাশরুমে গড়পড়তা অত্যাবশ্যকীয় ট্রেস এলিমেন্টসহ ৫৭-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান। মিনারেল হিসেবে।

Banglastatusথেকে সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News)ফিডটি।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url