বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশের চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শেষ হতে যাচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর মেয়াদ কাল। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি । এরপর টানা দুই মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্রপতি টানা দুইবার এই পদে তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী কেউই দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন না। রাস্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মেয়াদ কত বছর
বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থা সংসদীয় গণতন্ত্র চালু থাকায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থাকেন রাষ্ট্রপতি। নির্বাচনের অন্যসব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান পান সংবিধান।
এবং দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিনি তার দায়িত্ব পালন করেন এবং তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দেশের আইন শাসন এবং বিচার বিভাগের আনুষ্ঠানিক প্রধান।
এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক তিনি একবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি এই পদে বহাল থাকেন।
তবে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অন্য কেউ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল থাকবেন প্রশ্নপত্রের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনও ফৌজদারী অপরাধের বিচার করা যায় না।
এছাড়া তাঁর গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যায় না।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কিভাবে নির্বাচিত
বাংলাদেশের ১৯৯১ সালের আগে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থা থাকায় তখন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন।
তবে বর্তমানের সেই ব্যবস্থা আর নেই ২০১১ সালের সংবিধানের ১২ তম সংশোধনীর পর বর্তমানে সংসদে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন । ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির যেকোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন।
নির্বাচন হবে সংসদের কক্ষে এর আগে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল যাচাই বাছাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মত কাজ ব্যবস্থাপনা করে সংসদ এই দলগুলো রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দিতে পারে ।
তবে যেহেতু সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশের ফ্লোরক্রসিং বা এক দলের সাংসদ হয়ে অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
তাই সাধারণত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের প্রার্থী রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হয়ে থাকেন ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার নূন্যতম বয়স কত
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি হতে হলে তার কিছু যোগ্যতা থাকতে হবে। রাষ্ট্রপতি হতে হলে তাকে অবশ্যই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হতে হবে।
সংসদ সদস্য হতে হলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স ২৫ বছর । রাষ্ট্রপতি হতে হলে বয়স ২৫ বছর হলেই হবেনা বরং তার বয়স ৩ ৫ বছর পূর্ণ হতে হবে।
এছাড়া মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর তা থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক না হওয়া ফোজদারি অপরাধে দুই বছরের বেশি মেয়াদে সাজা ভোগ না করা ।
এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার ইত্যাদি নানা শর্ত রয়েছে।
কখনো অভিশংসন এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হন তাহলেও তিনি দ্বিতীয় বার আর রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না ।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি সংসদ সদস্যদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আর কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি হলে দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকে তাঁর আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে ।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলী
সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি কোন নির্বাহী ক্ষমতা নেই। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শেই তিনি তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
যেমন কোনো আইন প্রণয়ন করতে হলে তাতে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর দরকার হয় তবে এর আগে সেই আইনের বেল এবং প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হতে হয় ।
তবে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তার একক সিদ্ধান্তের নিয়োগ দিতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে ও নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের নেতাকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানান তিনি ।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি সে ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি দের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তার বাকি সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।
তবে এখানে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী আসলেই রাষ্ট্রপতিকে কোন পরামর্শ দিয়েছেন কিনা এবং দিলেও সেই পরামর্শ দেশের কোন আদালত সেই প্রশ্নের তদন্ত করতে পারবে না ।
সংবিধানের ধারা অনুযায়ী দেশের আদালত ট্রাইবুনাল বা অন্য যে কোন আদালতের দেয়া যে কোন দন্ড ক্ষমা করা স্থগিত করা বা কমিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি অনুরোধ করলে যে কোন বিষয়ে তিনি মন্ত্রিসভা পাঠাতে পারেন। সংবিধান লঙ্ঘন গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশিত করা যেতে পারে ।
এক্ষেত্রে সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ছবি সহ অভিযোগের বিবরণ যুক্ত একটি প্রস্তাব নোটিশ আকারে স্পিকারের কাছে পাঠাতে হয়।
এই নোটিশ দেয়ার পর থেকে ১৪ দিনের আগে এবং ৩০ দিনের পর এই প্রস্তাব সংসদে আলোচিত হতে পারবে না।
এছাড়াও শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিরা তার পদ থেকে অপসারণ করা যায় । অভিযোগ বিবেচনার সময়ের রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকার এবং প্রতিনিধি পাঠানোর অধিকার থাকবে অভিযোগ বিবেচনার পর সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা কমপক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের অভিযোগ যথার্থ উল্লেখ করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে রাষ্ট্রপতির পদ ওই দিন থেকে শূন্য হয়।
আরো পড়ুন= বাংলাদেশে কত সালে মোবাইল ফোন চালু হয়
Banglastatusথেকে সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News)ফিডটি।
